এগুলো সম্পূর্ণ গুঁজব, মোবাইল ফোন ব্যবহারে কোন শারীরিক ক্ষতি হতে পারে, এমন কোন প্রমাণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি! হ্যাঁ ফোন থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন বের হয় কিন্তু সেটার এতটা শক্তি নেই যে আপনাকে অসুস্থ করবে, মানুষের সেটা সহ্য করার যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে!
হাঁ, এটি সম্ভব যে রেডিয়েশনের ফলে ক্যান্সার হতে পারে কিন্তু সকল ধরনের রেডিয়েশনের ফলে ক্যান্সার হয় না। এবং স্মার্টফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশনের ফলে কখনোয় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা নেই।
মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা হয় রেডিও ফ্রিকুএন্সি ওয়েভস। এবং রেডিও ফ্রিকুএন্সি ওয়েভসে অনেক লো এনার্জি থাকে। আপনার মোবাইল অপারেটররা তাদের নেটওয়ার্কের এর জন্য যে ৭০০ মেগাহার্জ বা ৮০০ মেগাহার্জ বা ২০০০ মেগাহার্জ বা অন্যান্য আলাদা আলদা ব্যান্ডস ব্যবহার করে থাকে তা সবই রেডিও ফ্রিকুএন্সি ওয়েভস এর উপর হয়ে থাকে। আর এই রেডিও ফ্রিকুএন্সি ওয়েভসে এমন ক্ষমতা থাকে না যা আপনার শরীরের কোন অংশের ক্ষতি সাধন করতে পারে।
রেডিয়েশন প্রধানত ২ ধরনের হয়ে থাকে। নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন এবং আয়োনাইজিং রেডিয়েশন। নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন কম ফ্রিকোয়েন্সির হয়ে থাকে এবং কম ফ্রিকোয়েন্সি মানে কম এনার্জি। কিন্তু রেডিয়েশনের ফ্রিকোয়েন্সি যতো বাড়ে এটি ততো বেশি এনার্জি সম্পূর্ণ হয়ে উঠে এবং হাই ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশনকে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন বলা হয়।
উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন যে, পাওয়ার লাইনস, রেডিও এবং সেলফোন, মাইক্রোওয়েভস ইত্যাদি নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশনের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ এগুলো কম ক্ষমতা সম্পূর্ণ এবং আপনার জন্য একদম ক্ষতিকর নয়। ক্ষতিকর রেডিয়েশন শুরু হয়ে থাকে আলট্রা-ভায়লেট রশ্মি থেকে এবং এর উপর যে এক্সরে বা গামা রে আছে তা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
কিন্তু এগুলো এতো ক্ষতিকর কেন? চলুন এ বিষয়ে কিছু জ্ঞান নিয়ে নেওয়া যাকঃ
যেকোনো অ্যাটমের উপর কোন উৎস থেকে যদি অনেক উচ্চ ক্ষমতা সম্পূর্ণ কোন ওয়েভস নিক্ষেপ করা হয় তবে উচ্চ ক্ষমতার কারণে ঐ অ্যাটম থেকে কিছু ইলেকট্রন বেড় হয়ে যেতে পারে। ইলেকট্রন বেড় হয়ে যাওয়ার কারণে ঐ অ্যাটমটি আয়োনাইজ হয়ে যায় এবং ঐ তরঙ্গের ভেতর আয়োনাইজিং সক্ষমতা প্রমান পাওয়া যায় এবং এই আয়োনাইজিং সক্ষমতা শুরু হয়ে থাকে আলট্রা-ভায়লেট রশ্মি থেকে এবং এর আরো উপরের উচ্চ ফ্রিকুএন্সির রেডিয়েশনে।
আর এজন্য আমরা বলে থাকি যে বাহিরে সূর্যের আলো থেকে আলট্রা-ভায়লেট রশ্মি এসে আমাদের স্কিন ক্যান্সার ঘটাতে পারে, আলট্রা-ভায়লেট রশ্মি থেকে চোখের সমস্যা হতে পারে।
কিন্তু এর নিচের যেসব রেডিয়েশন আছে যেমন রেডিও এবং সেলফোন, মাইক্রোওয়েভস ইত্যাদি থেকে অনেক দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোন ক্ষতির সম্ভবনা নাই। তো এখানে একটি কথা পরিষ্কার যে আপনার মোবাইল ফোন থেকে আপনার কোন প্রকারের ক্ষতি একদমই হবে না। আপনার ফোন ব্যবহার করতে করতে যদি আপনার মাথা ব্যাথা করে তবে অবশ্যই তা আপনার ফোনের জন্য নয় বরং হয়তো অন্য কোন কারণে তা হচ্ছে।
আজ পর্যন্ত যতো গুলো গবেষণা হয়েছে এই বিষয় নিয়ে তাদের প্রত্যেকটি গবেষণা সর্বশেষে এটিই বলেছে যে, মোবাইল ফোন থেকে কোন প্রকারের কোন ঝুঁকি একদমই নেই। মোবাইল ফোন ছাড়াও আমরা যদি কথা বলে থাকি ওয়াইফাই নিয়ে ব্লুটুথ নিয়ে বা মাইক্রোওয়েভ নিয়ে তবে এইসকল প্রযুক্তিও আপনার কোন প্রকারের ক্ষতি করে থাকে না।
ওয়াইফাই থেকেও ক্ষতি হয় কি না?
অনেকে বলে থাকেন যে ওয়াইফাই ক্ষতিকর কেনোনা এটি অনেক হাই এনার্জি ব্যবহার করে। গিগাহার্জ! ওয়াইফাই গিগাহার্জ ফ্রিকুএন্সি ব্যবহার করে। গিগাহার্জ মানে ১ সেকেন্ডে বিলিয়ন বার। তো এটি নিয়ে অনেকে ভাবে যে ওয়াইফাই সিগন্যালের কাছে থাকলে এটি আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। এরকম র্যায় আপনি নিজেও বানানোর আগে জেনে নিন যে ওয়াইফাই একটি নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন।
আপনার ওয়াইফাই থেকে অনেক বেশি, প্রায় হাজার গুন বেশি রেডিয়েশন থাকে আপনার ঘরে জ্বলে থাকা বাল্বটিতে। তো আপনি যদি বাল্বের রেডিয়েশন নিয়ে চিন্তত না হয়ে থাকেন তবে কেন ওয়াইফাই রেডিয়েশন নিয়ে চিন্তা করছেন। আপনি জানেন কি সাধারন আলোতে টেরাহার্জ ফ্রিকুএন্সি থাকে। যেটি ওয়াইফাই ফ্রিকুএন্সি থেকে হাজার গুন বেশি।
শেষ কথা হলো এটাই যে, আপনি আপনার ফোন দিনে ১ ঘণ্টা ব্যবহার করুন আর ১০ ঘণ্টা, এতে আপনার কখনই কোন সমস্যা হবে না। ক্যান্সার হওয়া তো অনেক দুরের কথা। সারাদিন ওয়াইফাই ব্যবহার করুন আর যতো খুশি ইন্টারনেট আর ডাটা আদান প্রদান করুন, কখনই কোন সমস্যা হবে না। এই বিষয়টি তো আমি সুত্র অনুসারে বুঝিয়েই দিলামই এবং এটি বিজ্ঞানিক ভাবেও প্রমানিত হয়েছে যে, নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন থেকে আপনার শরীরের কোন প্রকারের ক্ষতি হওয়া সম্ভব নয়!